somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরবে বাংগালীদের দুর্দশার কারন-৭ঃদলাদলি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশের অংগ সংগঠন থাকা নিষিদ্ধ করে একটা ধারা যুক্ত করে ।এটা যে কতটা যৌক্তিক আর দেশপ্রেমমুলক তা প্রবাসী মাত্রই বুঝতে পারে ।

সৌদিতে কিছু লোক আছে যারা করে দুইনম্বরি কাজ-কারবার কিন্তু ব্যাক্তিগত কার্ডে পরিচয় নাম/একটা পদের নাম/লীগ-দল-জামাত/সৌদি-আরব শাখা ।লোকজনের সাথে সাক্ষাতে সে একটা কার্ড দিয়ে এ পরিচয়টাই গর্বের সাথে বলে ।এখন কথা হল কেন বলছি এসব পরিচয় খারাপ ? তার কিছু নমুনা দিচ্ছি ।

প্রথমেই একজন ঊদ্যোগী হয় দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে । দেশের ইমেজ নষ্ট হয়ে গেছে ।ইমেজ বাড়াতে হবে ।এ অবস্থায় দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে বসে থাকা যায় না ।উদ্যোগীব্যক্তি ও আরো কয়েকজন মিলে সমমনা রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের নিয়ে কোন পার্কে কোন এক শুক্রবার বিকেলে মিটিংয়ের আয়োজন করে । সে মিটিংয়ে জনপ্রতি চা-স্যান্ডউইচ বাবদ ২ রিয়াল করে ২০০ লোকের জন্য ৪০০ রিয়াল করে খরচ করা হয় ।
সভা শেষে সমিতি পরিচালনার জন্য জনপ্রতি একটা চাঁদা ধরা হয় । ধরা যাক সপ্তাহে জনপ্রতি ১০ রিয়াল ।এরপর এই সভার খবর পরিচিত মহলে প্রচার করা হয় । যারা অতি ব্যস্ত শুক্রবারেও যারা সময় দিতে পারে না এমন লোকও চাইলে ১০ রিয়াল খুঁশি মনে পাঠিয়ে দেয় । দেশের জন্য কিছু খরচ করতে পেরে মনে মনে আহ্লাদিত হয়। ধরা যাক , এমন লোকের সংখ্যাও ২০০ ।প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরো বেশি হয় ।
তাহলে প্রতি্সপ্তাহে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় (২০০+২০০)*১০=৪০০০রিয়াল।
মাসে ৪০০০*৪=১৬০০০।
৬ মাসে ১৬০০০*৬=৯৬০০০~১লাখ রিয়াল=১৮লাখটাকা ।
এখন কথা হল এ ৬ মাসে সমিতি মিটিং্যে কি আলোচনা হয় ।যারা রবীন্দ্রনাথের “ঘরে-বাইরে” পড়েছেন তাদের জন্য বেশি কথার দরকার নেই ।চাপা পিটিয়ে দেশের ভিতরের-বাইরের সমস্যা এক নিমিষেই সমাধান করে ফেলা হয় ।মনে হয় এই মুহুর্তে তাকে জাতিসংঘের মহাসচিব করা হলে বাংলাদেশ-সৌদিসহ দুনিয়ার আপামর সমস্যার সমাধান সে এক নিমিষেই করে ফেলতে পারবে । সমিতি সদস্যরা তার বাকপটুতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় ।

আর যে রিয়ালগুলো তার কাছে জমা থাকে সেগুলো দিয়ে সে তলে তলে ঢাকায় ১টা ফ্ল্যাট কেনার বন্দোবস্ত করে ।ঠগের টাকা বাটপারে মারে বলে একটা কথা আছে ।
এতগুলো মানূষের মারা টাকা যাবে কোথায় !সেও ঢাকায় প্রতারক কোন রিয়েল এস্টেট কোম্পানীকে এ টাকা দিয়ে ধরা খায় ।এক কান, দুই কান করে সবাই ব্যপারটা জেনে যায় ।সমিতির মিটিংও আর হয় না, নেতাকেও আর দেখা যায় না ।২০০~২৫০রিয়ালের জন্য কেউ অত চিল্লাচিল্লিও করে না ।এ হল বিদেশের মাটিতে দেশের ইমেজ রক্ষা করার জন্য নেতাদের কাজ ।

এরকম বহু লোক নেতা সেজে দল/লীগ ভাবধারার সমিতি করে টাকা মেরে চুপসে গেছে কিংবা টাকার পরিমান বেশি হলে দেশে ভেগে গেছে ।এখন কোন প্রবাসীকে সমিতি করার প্রস্তাব দিলে সে আতকে উঠে –এ আবার কোন উতপাত !

তবে এদিক থেকে জামাতিরা ভালো অবস্থায় আছে ।দেশে ১টা মসজিদ করে ৪দিক থেকে ৪টা ফটো-তুলে ৪টা মসজিদের খরচের সমপরিমান টাকা কিংবা ১টা টিঊবঅয়েল নির্মান করেঐটারই ১০০টা ছবি দেখিয়ে ১০০টার জন্য সৌদিদের কাছ থেকে টাকা পেয়ে তাদের পকেট গরম থাকে । তাদের মিটিংয়ে ঊল্টো পকেট খরচ পাওয়া যায় আর সব মিটিং হয় বড় বড় হোটেলে –বিশাল আয়োজন আর ধুমধামের মধ্যে ।
বহু রোহিঙ্গা জামাতের ছায়াতলে বাংগালী কমিউনিটির নেতা বনে গেছে । এদের অর্থ-প্রভাব ও বাংলাদেশ এম্বাসিতে দাপটঅন্য অনেকের চেয়ে বেশি ।

দলাদলির আরেকটা দিক যেটা সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় তাহল –বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক ইগো এবং একে কেন্দ্র করে সশস্র লড়াই ।আল-হাসাতে একবার ফরিদপুর গ্রুপ বনাম নোয়াখালী গ্রুপেরমাঝে বিশাল মারামারি হয় । ১ ঘনটা পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হয় ।বিকেলে লোকজন কাজ শেষে বাজার নিয়ে ফিরছিল ।কেউ কেউ রাস্তা দিয়ে হেটে অন্য কোথাও যাচ্ছিল ।ঠিক সে সময় পুলিশের গাড়ি এসে যাকে যে অবস্থায় পেয়েছে গাড়িতে তুলে সেই এককাপড়ে পরবত্তী ২/৩ দিনে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় ।অথচ মারামারি কয়েক ঘন্টা আগেই শেষ হয় আর ঘটনার কুশীলবরাও অদৃশ্য ।শাস্তি যারা পায় তারা জানতেও পারেনি সেদিন তাদের কি অপরাধ ছিল ।পরে জানা গিয়েছিল,রুমে থাকা নিয়ে বাক-বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ বাধে ।

আর কর্মক্ষেত্রে এরা কি পরিমান অশান্তি সৃষ্টি করে তার একটা নমুনা একজন পাঠক আমার অন্য একটি পোস্টে করেছেন ।হুবহু তুলে দিলাম।
................................................................................................।
এস,আহমেদ বলেছেন: বহু দেশের মানুষের সাথে মিশেছি কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশি ছাড়া আর কাউরেই দেখি নাই রাজনীতি নিয়া মাথা ঘামাইতে। অথছ আমরা যেখানেই এক হই শুরু হয়ে যায় হাসিনা খালেদা, আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং যথারীতি মারামারি হানাহানি। বাংলাদেশিরা বসবাস করে এমন প্রত্যেকটি এলাকায় গ্রুপিং হয় জেলা ভিত্তিক এবং যখন ঝগড়া হয় তখন ইয়া বড় বড় রাম দা, লোহার রড আর কতকি নিয়া রাস্তা নামে পতিপক্ককে (নিজের দেশি ভাইরে) মারতে! এটা আন্য কোন জাতি কল্পনাও করতে পারে না। কোন কন্ট্রাক্টর আমাদের কাজে নিতে চায় না কারন ওরা বলে, বাংলাদেশিরা কাজ ভাল করে কিন্ত ওরা যে নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে এটা কে সামলাবে!!!! সত্যি কথা কি অন্যদেশের লোকেরা আমাদের ভয় পায় এবং এড়িয়ে চলে কারন আমরা ভিষন ঝগড়াটে!!!

ভাই আরো কত কি আছে লিখে শেষ করা যাবে না।

...................................................................................................।।
এখানে আমি আরেকটু যোগ করতে চাই ।
কিছু বাংগালি আছে কাজ কম জানে বা বুঝে । কিন্তু তারা অন্যের নামে ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে বদনাম থেকে শুরু করে সব ধরনের দোষত্রুটি উচ্চপদস্থ বসের কাছে তুলে ধরে নিজে কিছু বাড়তি সুবিধা নিতে যায় ।আর তখনই বাধে অনিনার্য সংঘাত ।মালিক বা কোম্পানী চুপচাপ থাকে । আকামা রিনিউ করার সময় চাকুরির মেয়াদ না বাড়িয়ে সোজা Exit .
ঠিক এসব কারনে একই পদে কাজ করে বাঙ্গালী হলে বেতন কম , অন্যদেশের হলে বেতন বেশি । বছর শেষে বেতন বাঙ্গালীদের বাড়ে না , অন্যদের বাড়ে ।

(ক্রমশঃ)

(৬ষ্ঠ পর্ব ) (৮ম পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪১
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×